তাজিংডং বিজয় -- শেষ পর্ব

0

কিছুদূর যেতেই শুরু হলো বড় বড় সব পাহাড়। কিছু সময় ধরে একটানা হেটে উঁচু খাড়া খাড়া পাহাড়ে উঠছি, আবার নামার সময় একদম খাড়া নিচে নেমে যাচ্ছি..নামার সময় কিছু কিছু সময় থমকে যাচ্ছিলাম, কারণ একবার পা ফসকালেই কোথায় গিয়ে পড়বো.. সেটি একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না.. তারপরও সাহস নিয়ে এগিয়ে চল্লাম... পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে রোমঞ্চে ভরা... নেশার মতো..


পাহাড়ি খাড়া রাস্তা.. একদম সোজা উপরে উঠে গেছে

কিছুদূর যাবার পরে আবার ক্লান্তি পেয়ে বসলো, সাথে তীব্র পানির পিপাসা। কিন্তু পানি খাওয়া যাবে না, কারণ পানি খেলেই আরো ক্লান্ত হয়ে যাবো এবং পানিও কম..মাত্র দিন শুরু.. এখনই সব পানি খেয়ে ফেললে পরে আর পানি পাওয়া যাবে না। তখনি গাইড মামা একটি সুখবর দিলেন... কিছুদূর পরেই নাকি বোডিং পাড়া.. ঐখানে মুরং জাতিরা বাস করে এবং সেখানে ঝিরি রয়েছে..(ঝিরি হলো পাহাড়ি ঝর্ণা বেয়ে আসা পানি.. যা অত্যন্ত শীতল এবং পরিষ্কার).. সেখানে আমরা কিছুক্ষন বিশ্রাম নিবো...

কিন্তু বোডিং পাড়া পৌঁছানোর আগেই বাঁধলো বড় বিপত্তি... এবার পাহাড় থেকে নামার জন্য কোনো রাস্তা নেই...রাস্তার বদলে আছে কয়েকটা খাড়া গাছের সাঁকো.. তাও একেকটা প্রায় ২ তালার সমান.. ওইটা দেখেই বুক কাঁপা শুরু হয়ে গেলো.. পিছনে ফেরার সুযোগ থাকলে তখনি চলে আসতাম....


সেই ভয়ঙ্কর গাছের সাঁকো..

তো যাইহোক এবার সাহস নিয়ে গাছের সাঁকো পার করে কিছুদূর হাটতেই বোডিংপাড়ার দেখা পেয়ে গেলাম.. সেখানে গিয়ে কতক্ষন বিশ্রাম নিলাম, ছবি তুললাম...

ওইযে দেখা যায় বোডিংপাড়া.. পাহাড়ের উপর থেকে তোলা ছবি..


বোডিংপাড়ার ঝিরি..

এবার আবার হাঁটা শুরু করলাম.. এবারের পথ আরো দীর্ঘ এবং দুর্গম.. আমাদের পরবর্তী গন্তব্য শেরকর পাড়া...শেরকর পাড়া পর্যন্ত যেতে ৪/৫টি বড় বড় পাহাড় পাড়ি দিতে হবে.. ততোক্ষনে সূর্য একদম আমাদের মাথার উপরে....
প্রায় ৪০ মিনিট হাঁটার পর আমি, মঞ্জু এবং হামজা ক্লান্ত হয়ে গেলাম.. শরীর আর চলছেই না... পাহাড়ের কোলেই মাটিতে শুয়ে পড়লাম.. শুতেই মঞ্জু ঘুমিয়ে পড়লো.. 


প্রায় ৩০ মিনিট রেস্ট নেওয়ার পর আমরা আবিষ্কার করলাম আমরা সবার পিছনে.. এবং সবাই আমাদের রেখে অনেক সামনে চলে গেছে.. পরে আমরা অনুমান করে করে হাঁটা শুরু করলাম.. যা ছিল অত্যন্ত বিপদজনক...

কিছুক্ষন হাঁটার পরে আবার সবাইকে পেয়ে গেলাম ..আমরা ততোক্ষনে শেরকরপাড়ার একদম কাছে.. শুধু একটি পাহাড় পাড়ি দিলেই শেরকরপাড়া.. কিন্তু পাহাড়টি ছিল একদম খাড়া.. তাই কিছুক্ষন রেস্ট নিয়ে আবার উঠা শুরু করলাম..

এই পাহাড় পাড়ি দিলেই শেরকরপাড়া...গাইড মামা বসে আছে...

অবশেষে বিকাল ৫ টায় আমার শেরকরপাড়ায় পৌছালাম.. সেখানে গিয়ে একটি কটেজে উঠলাম..আমাদের আজকের রাত্রিযাপনের জায়গা এটাই....

শেরকরপাড়া 

শেরকরপাড়ার রাতটি ছিল ভয়ঙ্কর ... সারারাত পায়ের ব্যথায় ঘুমাতে পারিনি.. সাথে ছিল তীব্র শীত.. বন্ধু রায়হান রাতে পা টিপে দিলে সকাল সকাল ব্যথা একটু কমতে শুরু করে.. রাতে পায়ের ব্যথায় সিদ্বান্ত নিলাম আমি মিরাজ মঞ্জু আগামীকাল এখান থেকে বাসায় ফিরে যাবো...


Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)